ফুলতলায় কলেজ ক্যাম্পাসে দিনে দুপুরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হলো অনার্স পড়ুয়া ছাত্র

প্রকাশঃ ২০২২-০৩-৩১ - ২৩:২৬

তাপস কুমার বিশ্বাস, ফুলতলা (খুলনা)// প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হলো অনার্স পড়ুয়া ছাত্র সৈয়দ আলিফ রোহান (২০)। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফুলতলা এম এম কলেজ ক্যাম্পাসে। এ ঘটনায় আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সে ফুলতলার পায়গ্রাম কসবা গ্রামের সৈয়দ আবু তাহের এর পুত্র। কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৪২ বছর পর কোন শিক্ষার্থীর এই প্রথম খুনের ঘটনা ঘটলো ।

পুলিশ ও কলেজ সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে ফুলতলা এম এম কলেজের ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় গেটের ভিতরে দাড়িয়েছিলেন সমাজকর্ম বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্র আলিফ রোহান। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ৫/৬ কিশোর দুর্বৃত্ত আকস্মিকভাবে তার বুকে ও পেটে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে তাঁজপুরের দিকে চলে যায়। পরে সহপাঠিরা দ্রæত তাকে উদ্ধার করে গুরুতর অবস্থায় ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অবস্থা আশাংকাজনক হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু ঘটে।

ফুলতলা এম এম কলেজের অভ্যন্তরীন পরিবেশ কমিটির প্রধান গাজী ইয়ামিন জানান, কলেজ ক্যাম্পাসে কতিপয় বহিরাগত যুবকদের উপস্থিতির বিষয়টি অধ্যক্ষকে অবহিত করে কমিটির সদস্যদের নিয়ে শিক্ষক মিলনায়তনে ফিরে যাই। অল্প সময়ের মধ্যে এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এমন সংবাদ জানতে পেরে বাঁশি বাজিয়ে হুইসেল দেই। তাৎক্ষনিকভাবে শিক্ষক-কর্মচারীরা ঘটনাস্থলে আসার পূর্বেই ওই ছাত্রকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে বিষয়টি অবহিত করার পর স্যার কি ব্যবস্থা নিয়েছেন সেটি জানি না।

কলেজ পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আহমেদ বলেন, কয়েকদিন ধরে কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগত আনাগোনা বেড়ে যায়। মাঝে মধ্যে কতিপয় ছাত্রনেতাদের সহযোগিতায় বহিরাগতরা এসে নিয়মিত ছাত্রদেরকে লাঞ্চিত করে। কলেজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কমিটিসহ শিক্ষকেরা অধ্যক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছেন। এ সকল ঘটনার কোন প্রতিকার না হওয়ায় কলেজ প্রতিষ্ঠার ৪২ বছর পর ক্যাম্পাসে একজন ছাত্রের জীবন দিতে হলো।

কলেজ অধ্যক্ষ শেখ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, কলেজের ভেতর বিশৃঙ্খলা করার ঘটনা শুনে ছাত্র-ছাত্রীদের মিলনায়তনে একত্রিত করে তাদেরকে নিয়ে সচেতনমুলক সভা করা হয়েছে। এরই মধ্যে হাসপাতাল থেকে ঐ শিক্ষার্থীর মৃত্যু সংবাদ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে পুত্রহারা পিতা সৈয়দ আবু তাহের বেদনাবেদুর কণ্ঠে বলেন, আমার একমাত্র পুত্র আলিফ কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। লেখাপড়া শেখানোর জন্য সুস্থ সবল সন্তানকে কলেজের পাঠিয়ে এখন তার লাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে। যারা আমার নিরাপরাধ সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। দুই ভাই-বোনের মধ্যে আলিফ ছিল ছোট। খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলতলা সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে আলিফ মোটরসাইকেল পার্টস এন্ড সার্ভিস পয়েন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে কলেজ ছাত্রের খুনের খবর পেয়ে খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহম্মদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইকবাল হোসেনসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন, হত্যাকারীদের সনাক্ত ও আটকের জন্য বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন।

ফুলতলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইলিয়াস তালুকদার, প্রেমঘটিত ঘটনায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে কলেজ ছাত্র আলিফকে খুন করা হতে পারে ধারনা করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত ও আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ মর্গে লাশের ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় । এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এখনও কেউ আটক হয়নি।