ঢাকা অফিস : অনলাইন সুইসাইডাল গেম ব্লু হোয়েল খেলে রাজধানীতে এক কিশোরের আত্মহত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কিশোরের নাম মো. সায়েম। বয়স ১৬। সে মিরপুরের কাজিপাড়ার বাসিন্দা।
সোমবার রাত নয়টার দিকে কাজিপাড়ার বাড়ি থেকে পুলিশ সায়েমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। আত্মহননকারী ওই তরুণের হাতে ‘ব্লু হোয়েলের’ ছবি আঁকা ছিল। তার পরিবার ও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন সায়েম ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত ছিল।
পুলিশ জানায়, রাতে খবর পেয়ে তারা সায়েমের কাজিপাড়ার বাসা থেকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় সায়েমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। সায়েম তার বাবার সাথে ফুটপাতে চা বিক্রি করতো।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে সায়েম নামে ওই কিশোর ব্লু হোয়েলে গেমে আসক্ত ছিল। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
‘ব্লু হোয়েল’ আসক্ত কিশোর হাসপাতালে :
এদিকে এবার মাদারীপুরে ‘ব্লু হোয়েল’ গেমে আসক্ত হয়ে অসুস্থ এক কিশোর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে তাঁকে রাজৈর উপজেলার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গাজীপুরের শ্রীপুরে ‘ব্লু হোয়েল’ গেমে আসক্ত ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রের খোঁজ পাওয়া গেছে।
ওই কিশোরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে ‘ব্লু হোয়েল’ খেলার নেশায় পড়ে কিশোরটি। এরপর শর্ত অনুযায়ী হাতে তিমি এঁকে ৭টি ধাপ অতিক্রম করে। এরই মধ্যে ফেসবুকে ‘ব্লু হোয়েল’ গেম খেললে মানুষ মারা যায় এমন একটি খবর পড়ে সচেতন হয় ওই কিশোর। এরপর তাঁকে সুই দিয়ে হাতে এক শ ছিদ্র করতে বলা হলে সে নিজেকে বাঁচাতে মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে। পরে রাতে তাকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কিশোরের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে মরণ নেশার হাত থেকে বেঁচেছে কি না, জানি না। ছেলে রাত হলে গেমটি খেলতে না পারলে পাগলের মতো হয়ে ওঠে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, এই “ব্লু হোয়েল” গেম যেন বন্ধ করে দেয়।’
হাসপাতালের চিকিৎসক পীযূষ চন্দ্র বলেন, ‘আমরা ছেলেটিকে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং দিচ্ছি, সে যাতে ভয় না পায়। তার মনে ভয় কাজ করছে। সে একবার বলছে, গেমটি আর খেলবে না। আবার কিছুক্ষণ পর বলছে, না খেলে থাকতে পারবে না। তবে চিকিৎসা চলছে। স্বাভাবিক হতে কিছুদিন সময় লাগবে।’
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ছেলেটি সুস্থ রয়েছে। ব্লু হোয়েল গেম সম্পর্কে বাবা-মাকে সতর্ক হতে হবে, যেন তাঁদের সন্তান এই খেলায় মগ্ন না হয়।
উল্লেখ্য, অনলাইন সুইসাইড গেম ব্লু হোয়েল। স্বেচ্ছায় কিংবা কৌতুহলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তরুণরা এই গেম খেলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। প্রতিবেশি দেশ ভারতের এই মরণছোবল হেনেছে অনেকদিন হলো। এবার বাংলাদেশেও এই গেমে আসক্তদের খবর মিলছে।
আত্মঘাতি এই গেমের ৫০টি ধাপ। সর্বশেষ পরিণতি মৃত্যু। লেভেল ও টাস্কগুলি ভয়ঙ্কর। গেম যত এগোবে, টাস্ক তত ভয়ঙ্কর হতে থাকবে। প্রথমদিকের টাস্কগুলি মজার হওয়ায় সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে কিশোর-কিশোরীরা। কেউ খেলায় ইচ্ছুক হলে তার কাছে পৌঁছে যায় নির্দেশাবলী। সেইমতো নির্দেশ বা চ্যালেঞ্জগুলি একে একে পূরণ করে তার ছবি পাঠাতে হয় গেম হ্যান্ডলারকে। নিজের হাত কেটে তিমির ছবি এঁকে ছবি তুলে পাঠাতে হয়। এই খেলায় অংশগ্রহণকারীকে হোয়েল বলা হয়। স্বেচ্ছায় তারা এই মরণ খেলায় যোগ দেয়।
বাংলাদেশে এই গেমের সব লিঙ্ক বন্ধ করতে গতকাল নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ছয় মাসের মধ্যে ব্লু হোয়েলের সব লিংক এবং রাত্রিকালীন ইন্টারনেটের বিশেষ প্যাকেজ বন্ধেরও নির্দেশ দেয়া হয়।