স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে কেসিসি মেয়র
ইউনিক প্রতিনিধি : খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানি শাসকদের নিপীড়ন এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় ১৯৭০ সালে দেশে সাধারণ নির্বাচন দেয়। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাংলার মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা’। তিনি বাঙালি জাতিকে শত্রুর মোকাবিলা করার নির্দেশ দেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে অতর্কিতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা করে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই ঘোষণা প্রচারিত হয়। শুরু হয় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। সিটি মেয়র আরো বলেন, স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে আমাদের যা কিছু অর্জন তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে তিনি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করেন। মাত্র ১০ মাসে তার নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে আমাদের সংবিধান প্রণীত হয়। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যান। সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন একটি শোষণ-বঞ্চণামুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে তাকে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর থেমে যায় বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা। হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ঘেরাটোপে আটকা পড়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। ঘাতক ও তাদের দোসররা ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকা-ের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে জারি করে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারে বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি গানিমুক্ত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন করে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আজ জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করছি। তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাস করেন, জাতির পিতার আদর্শে বিশ্বাস করেন; তাদের সব সময় এই প্রতিজ্ঞা করতে হবে, এই বাংলাদেশ আমরা স্বাধীন করেছি। স্বাধীনতার পতাকা যে উড্ডীয়মান, তা বিশ্বসভায় মর্যাদার সঙ্গেই উড্ডীয়মান থাকবে। এ দেশের মর্যাদা কেউ কখনো হানি করতে পারবে না। এটা আমরা হতে দেব না। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এই পতাকার মর্যাদা আমরা রক্ষা করব। স্বাধীনতার চেতনায় এই দেশ সারা বিশ্বে যে মর্যাদায় পেয়েছে, আরও উন্নত মর্যাদা যেন পায় তার জন্য আমরা কাজ করব। সেইভাবে আমাদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা নিয়ে কাজ করতে হবে। একটি দেশ স্বাধীন করা যেমন কঠিন; স্বাধীনতা রক্ষা ও এর সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়াটা আরও কঠিন কাজ। তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা শপথ নিই-মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে ক্ষুধা দারিদ্র্য নিরক্ষরতামুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে হবে। শুক্রবার সকাল ৯ টায় দলীয় কার্যালয়ে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্য এ্যাড. চিশতি সোহরাব হোসেন শিকদার, আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলাম বন্দ, সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মিজানুর রহমান মিজান, মো. আশরাফুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ কামাল, কাউন্সিলর ফকির সাইফুল ইসলাম, তসলিম আহমেদ আশা, অধ্যা: রুনু ইকবাল, কাউন্সিলর শেখ হাফিজুর রহমান, মো. সফিকুর রহমান পলাশ, মীর বরকত আলী। সভা পরিচালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগ দপ্তর সম্পাদক মো. মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ। এসময়ে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন মিন্টু, মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল সিংহ রায়, এ্যাড. রজব আলী সরদার, অধ্যক্ষ শহিদুল হক মিন্টু, জামাল উদ্দিন বাচ্চু, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যা.আলমগীর কবীর, এ্যাড. খন্দকার মজিবর রহমান, প্যানেল মেয়র আলী আকবর টিপু, মো. শাহজাদা, কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডন, প্যানেল মেয়র আমিনুল ইসলাম মুন্না, এ্যাড. অলোকা নন্দা দাস, শেখ ফারুক হাসান হিটলু, শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম, কামরুল ইসলাম বাবলু, বিরেন্দ্র নাথ ঘোষ, মো. মফিদুল ইসলাম টুটুল, শেখ নুর মোহাম্মদ, এ্যাড. সরদার আনিসুর রহমান পপলু, কাউন্সিলর শেখ মোশারাফ হোসেন, মোতালেব মিয়া, রনজিত কুমার ঘোষ, এবিএম আদেল মুকুল, এম এ নাসিম, এস এম আসাদুজ্জামান রাসেল, মোস্তাক আহমেদ টুটুল, জিয়াউল ইসলাম মন্টু, চ.ম মুজিবুর রহমান, আব্দুল হাই পলাশ, শেখ আবিদ উল্লাহ, বাবুল সরদার বাদল, এ্যাড. শেখ ফারুক হোসেন, শেখ আব্দুল আজিজ, এ্যাড. শামীম মোশারফ, এমরানুল হক বাবু, নজরুল ইসলাম তালুকদার, মো. আজম খান, শেখ হাসান ইফতেখার চালু, ওহিদুল ইসলাম পলাশ, নাহিদ মুন্সি, হাফিজুর রহমান হাফিজ, অভিজিৎ চক্রবর্তী দেবু, কাজী ইব্রাহীম মার্শাল, ইয়াসিন আরাফাত, কাউন্সিলর কনিকা সাহা, কাউন্সিলর মাহমুদা বেগম, রুমা খাতুন, রেখা খানম, নুর জাহান রুমী, নুরানী রহমান বিউটি, শবনম মোস্তারী বকুল, রেজওয়ানা প্রধান, পারভীন ইলিয়াছ, আইরিন আক্তার, নাছরিন চৌধুরী, লিভানা পারভিন, মেহজাবিন খান, রিমা আক্তার, মাহমুদুল হাসান শাওন, সোহান হাসান শাওন, জহির আব্বাস, ইয়াসিন আরাফাত, ঝলক বিশ্বাস, মাহমুদুল ইসলাম সুজন, শাহীন আলম, মাহমুদুর রহমান রাজেস, সংকর কুন্ডু, এম এস হোসেন সবুজ, ওমর কামাল সহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। এর আগে সকাল ৭টায় গল্লামারী বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, সকাল সাড়ে ৭টায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, দলীয় কার্যালয় আলোকসজ্জা, সকাল ৯টায় দলীয় কার্যালয় হতে বর্ণাঢ্য স্বাধীনতা র্যালি ও র্যালি শেষে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দিন ব্যাপি মহানগর কার্যালয় সহ সকল ওয়ার্ডে দলীয় কার্যালয়ে আলোকসজ্জা, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেশত্ববোধক গান, মুক্তিযুদ্ধের ছবি ও ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করা হয়।