খুলনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ

প্রকাশঃ ২০১৮-০২-১৪ - ০১:৩৮

খুলনা অফিসঃ শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠেছে প্রকৃতি। পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া গাছে লেগেছে আগুন রঙের খেলা। মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে আমগাছ। যান্ত্রিকতার কোলাহলমুখর নগরে, অতি কর্মব্যস্ত জীবনে যতোই নিষপ্রাণ, হিসেবী, প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন হন না কেন, বসন্তের এ দিনে মন গেয়ে ওঠবেই ‘বসন্ত বাতাসে..সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।’ মঙ্গলবার বসন্ত উৎসব ১৪২৪ উপলক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অদম্য বাংলার সামনে আসলে শুধু মনে হয় চারপাশেও শোনা যাচ্ছে এ ধরনের বসন্তের বিভিন্ন গানের সুর।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিসিপ্লিন পরিবারের উদ্যোগে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বসন্তবরণ করা হয়। এ উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে সাতটায় কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবনের সামনে থেকে বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়। কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন, বাংলা ডিসিপ্লিন প্রধান, ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রটি কাজী নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে দিয়ে কটকা স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে অদম্য বাংলার সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে হাজার বছরের বাংলা কবিতা ও গান শীর্ষক দিনের প্রথমপর্বের অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়।
প্রারম্ভে বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, বিশেষ অতিথি কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. সাবিহা হক। সভাপতির বক্তব্য রাখেন বাংলা ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. শেখ মোঃ রজিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির আহবায়ক সহকারি অধ্যাপক মৌমিতা রায়। পরে বাংলা ডিসিপ্লিন প্রধানের সঞ্চালনায় হাজার বছরের বাংলা কবিতা ও গান পর্বের সূচনা করা হয়।
এখানে চর্যাপদ থেকে শুরু করে মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের বাংলা ভাষার বিকাশ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য কবিতা, গান ও নৃত্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। এসময় বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের খণ্ডকালীন শিক্ষক প্রফেসর ড. সাধন রঞ্জন ঘোষের সক্রিয় অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিলো বিকেলে বিকেল ৪টায় সাংস্কৃতিক ও মুনীর চৌধুরী রচিত নাটক মানুষ মঞ্চায়ন।
খুবি ক্যাম্পাসে বাহারি ফুলে সেজেগুজে ঘুরে বেড়িয়েছেন তরুণীরা। পরনে লাল, হলুদ ও বাসন্তি রঙের শাড়ি। মাথায় গোলাপ, বেলি, গাঁদা জিপসি ফুলের টায়রা, কপালে টিপ, হাতে চুড়ি, পায়ে নুপূর, খোঁপায় লাল টকটকে চন্দ্র মল্লিকা, বেনিতে গোঁজানো গাঁধা ও রজনীগন্ধা।
খুবি ক্যাম্পাস ছাড়াও নগরীর পথ-প্রান্তরে বাসন্তী হলুদের আভরণে অন্য রঙগুলোও যেন বসন্তের উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে। নববধূ থেকে শুরু করে অনেক গৃহিণীরাও বসন্তবরণে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। এসব অনুষ্ঠানের কোথাও কোথাও গান বাজছে- বাসন্তি রং শাড়ি পরে…কোনো বধূয়া চলে যায়। পাঞ্জাবি, ফতুয়া পরা ছেলেরাও যোগ দিয়েছেন বসন্তবরণের বিভিন্ন আয়োজনে।
এছাড়া বিকাল ৫টা ২৫ মিনিটে শহীদ হাদিস পার্কে বাংলাদেশ রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা খুলনার উদ্যোগে চিরন্তন বাংলা গান আবৃতি ও নৃত্যের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব উদযাপন করা হয়।