খুলনা অফিস : খুলনার জিআরপি (রেলওয়ে) থানায় তিন সন্তানের জননীকে (৩০) গণধর্ষণের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার (০৫ আগস্ট) দুপুরে পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ এবং সদস্যরা হলেন কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ.ম. কামাল হোসেইন ও দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বাহারুল ইসলাম।
এদিকে, ধর্ষণের শিকার ওই নারীর ডাক্তারী পরীক্ষা সোমবার দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ওই নারীকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, খুলনা রেলওয়ে থানা হাজতে রেখে ৬/৭জন পুলিশ তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও মারপিট করে- মর্মে খুলনার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দরখাস্ত করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং তাকে ডাক্তারী পরীক্ষা করানোর জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ডাক্তারী পরীক্ষা শেষে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার সঠিক তথ্য উদঘাটনের লক্ষে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ঘটনাটি সরেজমিন অনুসন্ধান পূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ৭ দিনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, ওই নারীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের গাইনী চিকিৎসকরা পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। তার বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তবে, রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২ আগষ্ট ঘটনার রাতে খুলনা রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠান, এসআই গৌতম কুমার পাল, এসআই নাজমুল হাসান, কনস্টেবল মিজান, হারুন, মফিজ, আব্দুল কুদ্দুস, আলাউদ্দিন, কাজলসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তবে, ওই নারী ওসি ওসমান গনি পাঠানসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ ও মারপিটের অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগীর বড় বোন জানান, তার বোনের শ্বশুড় বাড়ি সিলেটে। বাপের বাড়ি ফুলবাড়িগেট এলাকায়। তাদের মা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাকে দেখতে খুলনায় এসেছে বোন। বোন নিজে অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার যশোরে ডাক্তার দেখাতে গেছিল। শুক্রবার আসার সময় ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাকে মোবাইল চুরির অপরাধে থানায় ধরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে জিআরপি পুলিশের ওসি ওসমান গনি পাঠান তাকে ধর্ষণ করে। এরপর আরও ৪ জন পুলিশ সদস্য পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরদিন শনিবার ৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ ওকে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করে।
তিনি আরও জানান, আদালতে বিচারকের সামনে নেয়ার পর তার বোন জিআরপি থানায় তাকে গণধর্ষনের বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরেন। এরপর আদালতের বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তার ডাক্তারী পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
ওসি ওসমান গনি ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই মহিলাকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ ২ আগস্ট আটক করা হয়। সেই মামলায় তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু আদালতে গিয়ে সে ধর্ষণের অভিযোগ করেছে। ফেসডিলের মামলা থেকে রক্ষা পেতে সে এ ধরণের মিথ্যা অভিযোগ করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।